ইন্টার্নশিপ গাইডলাইন।। পার্ট ১ || Factory Selection

intern jpg

সামনেই আমাদের অষ্টম ব্যাচের ইন্টার্ন। গতবছরে এই সময়ে যখন আমাদের ইন্টার্ন আসলো তখন ইন্টার্নে যাওয়ার আগে কিংবা ইন্টার্ন এ ঢুকে আমাদের করনীয় কি তা সম্পর্কে ব্যাচের আমরা ম্যাক্সিমাম ই অজ্ঞ ছিলাম। যার ফলে দেখা গেছে অনেকের ই ইন্টার্নে যেয়ে ফ্যাক্টরির ফ্লোরে খোলা মাঠে ছেড়ে দেওয়া গরুর মত ঘুরাঘুরি করা লাগত। 😛 ইন্টার্ন এর দুই মাস পার হয়ে যেতো কিন্তু শিখা হত সামান্য।

প্রিয় অনুজদের যেনো এ ধরনের কোন সমস্যায় পরতে না হয় সেজন্য ক্ষুদ্র জ্ঞানের আলোকে পার্ট ভিত্তিক কয়েকটা পোস্টে চেষ্টা করব ইন্টার্ন রিলেটেড বিষয়গুলিকে ক্লিয়ার করার।
আজকের প্রথম পার্টে আলোচনা করব দুইটা বিষয়।
১. ফ্যাক্টরি সিলেকশন
২. ফ্যাক্টরি তে যেয়ে করনীয়
#ফ্যাক্টরি_সিলেকশন অংশ টা ৮ম ব্যাচের জন্য প্রযোজ্য নয়। পরবর্তী ব্যাচ সমূহে যারা আছে তারা পয়েন্ট গুলো টুকে রাখতে পারো।
ইন্টার্ন এর প্রথম জিজ্ঞাসা ই ভাই এত এত ফ্যাক্টরি, তো আমরা কোন ধরনের ফ্যাক্টরিতে ইন্টার্ন করব। বা কোন ফ্যাক্টরি তে গেলে আমাদের দুই মাস সময় কাজে লাগাতে পারব এবং একটা আউটপুট নিয়ে বের হতে পারব। ধারনার জন্য নিচের পয়েন্ট গুলো ফলো করতে পারো-
১। কম্পোজিট ফ্যাক্টরি গুলো ইন্টার্ন এর জন্য সবচেয়ে ভালো। ইন্টার্নে ফ্যাক্টরি সিলেক্ট এর সময় ওই ফ্যাক্টরি তে কি কি সেকশন আছে খোঁজ নিয়ে যাওয়া মাস্ট। ডায়িং আছে নিটিং নাই কিংবা শুধু নিটিং আছে বা শুধু গার্মেন্টস এমন ফ্যাক্টরি তে না যাওয়াই উত্তম। আমাদের টার্গেট থাকতে হবে ম্যাক্সিমাম ডিপার্টমেন্ট কভার করে আসার। এইক্ষেত্রে নিট কম্পোজিট হলে নিটিং, ল্যাব, ডাইয়িং, ফিনিশিং, কোয়ালিটি, প্রিন্টিং, অল ওভার প্রিন্টিং, নিট ওয়াশিং, গার্মেন্টস আছে কিনা খোঁজ নিয়ে যাওয়া উত্তম। একই ভাবে ওভেন ফ্যাক্টরির ক্ষেত্রে ইয়ার্ন ডাইয়িং,ওয়ার্পিং,সাইজিং,উইভিং, ফিনিশিং, ওয়াশিং, ইন্সপেকশন সেকশন এবং ডেনিম এ বল ওয়ার্পিং, ডাইয়িং, এল সি বি, সাইজিং, উইভিং, ফিনিশিং, ওয়াশিং, ইন্সপেকশন সেকশন গুলি আছে কিনা খোঁজ নিয়ে যাব। তো কার থেকে খোঁজ নিব? -সিনিয়র বড় ভাইদের থেকে যারা বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে কর্মরত আছেন বা ছিলেন এবং পূর্বে যারা বিভিন্ন ফ্যাক্টরি তে ইন্টার্ন করেছেন।
২। যেই সব ফ্যাক্টরি তে তোমাদের সিনিয়র বড় ভাই কিংবা পার্সোনালি পরিচিত মানুষ আছে ওইসব ফ্যাক্টরিতে ইন্টার্ন করতে যাওয়া উচিত। টেক্সটাইল ফ্যাক্টরি গুলোতে সবার ই কাজের অত্যধিক প্রেশার থাকে। অপরিচিত কেউ হয়ত অত ব্যস্ততার মাঝে বেশি সময় দিতে পারবে না কিংবা অত কেয়ার করবে না। নিজেদের বড় ভাইরা শত ব্যস্ততার মাঝেও শিখাবে কিংবা যেকোন সেকশনের এক্সেস নিয়ে দিবে এবং ডিপার্টমেন্ট কনসার্ন দের সাথে পরিচয় করিয়ে বলে দিতে পারবে ‘ভাই, এরা আমার জুনিয়র, এদের শিখাবেন ভালো করে।’ ❤
৩। যেসব ফ্যাক্টরি তে ইন্টার্ন করলে পরবর্তীতে জব অফার করে কিংবা সিভি রেখে দেয় এবং নিয়োগ নিলে ভাইবা/রিটেন এর জন্য কল করে ওইগুলায় যাওয়া উচিত।
৪। ইন্টার্ন স্টুডেন্টদের দুই মাসের জন্য ইন্টার্নশিপ কোর্স কো-অর্ডিনেটর দেয় এমন ফ্যাক্টরি গুলোতে যাওয়া ভালো। অনেক নামীদামী ফ্যাক্টরি আছে ইন্টার্ন স্টুডেন্টদের কেয়ার করে না, আমার ওইসবে যাওয়া দরকার নাই।
৫। কিছু ফ্যাক্টরি ইন্টার্নিদের দুপুরের লাঞ্চের ফ্যাসিলিটি দেয় যা অনেক বড় একটা প্লাস পয়েন্ট।
৬। ফাইনাল প্রজেক্ট/থিসিসে যেসব কোম্পানি যেকোন প্রয়োজনে হেল্প করে।
ফ্যাক্টরি সিলেকশন এর আগে মোটামুটি এই পয়েন্ট গুলো মাথায় রাখলেই হবে। তবে এসব সুযোগ সুবিধা সবই একবারে পাওয়া সম্ভব না। ম্যাক্সিমাম গুলি যেখানে পাওয়া যাবে ওইদিকেই আমরা যাওয়ার চেষ্টা করব।
#ফ্যাক্টরি_তে_যেয়ে_করনীয়
8th Batch এর জন্য!
ফ্যাক্টরি ফ্লোরে যেয়ে দুই মাসের জন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব কোম্পানির রুলস রেগুলেশন মেইনটেইন করে চলার জন্য। এমন কিছু করব না যার জন্য TECN এর দুর্নাম হয়। ইন্টার্ন এ ভালো ইমপ্রেশন দেখাতে পারলে আমাদের পরবর্তী জুনিয়র দের ওই ইন্ডাস্ট্রি তে ইন্টার্ন শিডিউল পেতে বেগ পেতে হবে না পাশাপাশি জব অফার ও পাওয়া যাবে। একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে আমরা নোয়াখালী টেক্সটাইল কে রিপ্রেজেন্ট করতেছি। আমার কোন আচরণ/কাজে ক্যাম্পাস সম্পর্কে কেউ যেনো বাজে ধারনা পোষণ না করতে পারে তা খেয়াল রাখব।
এই দুই মাসে করনীয় বেসিক কিছু জিনিসের পরামর্শ-
১। প্রথমেই ড্রেসকোড। পোষাক রুচির প্রতিফলক। সর্বোচ্চ চেষ্টা করব ফর্মাল হয়ে যেতে, সেমিফর্মালেও যাওয়া যায় কিন্তু ক্যাজুয়াল ড্রেসআপে কোন ভাবেই যাওয়া যাবে না।
২। ফ্যাক্টরি ফ্লোরে তিন চারজন জড়ো হয়ে আড্ডা দেওয়া, এলোমেলো ঘুরাঘুরি করা কিংবা হেলান দিয়ে দাঁড়ানো অভদ্রতা, এই বিষয় গুলি ফ্যাক্টরিতে ভালো চোখে দেখা হয় না, তাই এগুলি পরিহার করতে হবে যেনো চলাচলে স্ট্যান্ডার্ড বজায় থাকে।
৩। যেই সেকশনে ই ঢুকি প্রথমেই সেকশনের অর্গানোগ্রাম জানা লাগবে। কার পদবী কি, কার দায়িত্ব কোনগুলি ইত্যাদি। এর ফলে যেকোন প্রয়োজনে কার কাছে যেতে হবে সেটা বুঝা যায়। তাই কোন সেকশনে ঢুকলে প্রথম দিনেই সেকশনের সবার সাথে নিজে থেকে পরিচিত হয়ে নিব যেনো যেকোন দরকারে তাদের হেল্প নেওয়া যায়।
৪। অপারেটর, হেল্পারদের সাথে আন্তরিক ও ভদ্র আচরন করতে হবে। প্রসেস সম্পর্কে তাদের জ্ঞান যথেষ্ট। তাদের সাথে আন্তরিকতা দেখালে অনেক কিছুই শিখা যায়। যখন তাদের কাজের প্রেশার বেশি তখন ডিস্টার্ব করার দরকার নাই। ফ্রি টাইমে তারা নিজে থেকেই শিখায়। আর ট্যাকনিক্যাল জিনিস গুলি জানার জন্য প্রডাকশন অফিসারদের হেল্প নিবো।
৫। ফ্লোরে কিছু জায়গায় লিখা থাকে ছবি তুলা নিষেধ। খেয়াল রাখবো। পাশাপাশি অনুমতি ছাড়া মেশিনারিজ বা অন্যকিছু হাত দিয়ে ধরবো না।
৬। লাঞ্চ আওয়ার, বিকাল পাঁচটার পর কাজের চাপ কম থাকে। তখন ফ্যাক্টরি লোকদের থেকে সকল জিজ্ঞাসা ক্লিয়ার হয়ে নিতে হবে। ফ্যাক্টরি থেকে কোন প্রশ্ন মাথায় নিয়ে বের হওয়া যাবে না।
৭। ফ্যাক্টরির কেউ নিজে থেকে শিখাবে না, নিজেদের চেষ্টা, আগ্রহ,আচার আচারন ইত্যাদি দিয়ে শিখে আসতে হবে। যখন তারা দেখবে শিখার প্রতি আন্তরিক, কেবল তখনি শিখা যাবে।
৮। ফ্যাক্টরির বড় বড় পোষ্টে যারা আছেন যেমন AGM/GM টাইপের তাদের সাথে পরিচিত হতে হবে। সম্ভব হলে প্রতি সপ্তাহে একবার হলেও তাদের সাথে দেখা করার চেষ্টা করব। আমরা অনেকেই এটা করি না। যার ফলে জবের স্কোপ হারিয়ে ফেলি।
৯। Industrial Attachment লিখা প্রথম সপ্তাহ থেকেই শুরু করতে হবে। Microsoft Word ফরম্যাটে প্রথম থেকেই একটু একটু করলে পরবর্তীতে প্রেশার অনেক কমে যায়। যদিও এসব বলে লাভ নাই কারন আমাদের স্বভাব হইলো সব ফাইনাল আওয়ারে করা। আমি নিজেও তাই করছিলাম। অনেক প্যারা খাইছি ভাই দুইদিন। তোরা খাইস না!
১০। ‘নিট এবং নিট ডাইয়িং টেকনোলজি’ নামে একটা বই আছে। ইন্টার্ন এ যা যা দেখা লাগে মোটামুটি সহজ ভাষায় ওইটায় পাওয়া যায়। আমরা বইটা সংগ্রহে রাখতে পারি। ভালো একটা বই। জব ভাইবায় ও কাজে দেয়। জব ও ক্যাম্পাস ফাইনাল ভাইবার জন্য আরেকটা ইনফরমেটিভ বই হচ্ছে ‘টেক্সরুট’। সংগ্রহে রাখার চেষ্টা করব।
১১। দুই মাসের ইন্টার্ন শেষ করে ক্যাম্পাসে ফিরার আগে সব সেকশনের হেড দের সাথে দেখা করে বিদায় নিয়ে আসব। সাথে একটা করে সিভির হার্ডকপি দিয়ে আসার চেষ্টা করব। আর কোথাও সিভির সফট কপি দিতে হলে অবশ্যই পিডিএফ ফরম্যাট এ দিব।
আমার সামান্য অভিজ্ঞতার আলোকে আপাতত এগুলাই মাথায় আসছে। ব্যাচমেট ও সিনিয়র ভাইদের অনুরোধ করছি কিছু মিসিং থাকলে কমেন্ট সেকশনে যোগ করে দিতে।
ইন্টার্নশিপ এর দুই মাসেই টেক্সটাইল এর সব শিখে ফেলতে হবে এমন কথা নেই। এই দুই মাস বিভিন্ন সেকশন ঘুরে টেক্সটাইল জবের পরিবেশ সম্পর্কে আইডিয়া নিয়ে আমি এই সেক্টরে জব করতে পারব কি না তা শিউর হওয়াই ইন্টার্ন এর প্রাইমারী উদ্দেশ্যে। তবে হলের আরামের লাইফ ফেলে দুই মাস যেহেতু কষ্ট করব তাই কিছু শিখে সময়টাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
ইন্টার্নশিপ গাইডলাইন পার্ট ২ এ নিটিং সেকশনে কি কি শিখা লাগবে তার লিস্ট দিয়ে দিব। কোন জিজ্ঞাসা থাকলে কমেন্ট সেকশনে বলার জন্য অনুরোধ রইলো। সবাই কে শুভকামনা।

Related Articles

প্রতি ছয় মাসে ০.৫ শতাংশ কমবে পোশাক রপ্তানিতে নগদ সহায়তা

প্রতি ছয় মাসে ০.৫ শতাংশ কমবে পোশাক রপ্তানিতে নগদ সহায়তা ২০২৬ সালের জুলাই মাসে রপ্তানিতে দেওয়া নগদ প্রণোদনার পুরোটা প্রত্যাহার করে নেবে সরকার। ২০২৬ সালের…

বাংলাদেশে আয়কর: হিসাব পদ্ধতি এবং বিস্তারিত বিশ্লেষণ

বাংলাদেশে আয়কর আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত এবং এটি পরিচালনা করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আয়কর একটি প্রগতিশীল কর ব্যবস্থা, যার মানে হল যে, আয়…

ইন্টার্নিশিপ গাইডলাইন। পার্ট ২।। নিটিং সেকশন

নিট বেসড ফ্যাক্টরি তে ইন্টার্ন করলে সবার প্রথমে নিটিং সেকশন দিয়ে শুরু হয়। ভবিষ্যৎ এ যেই ডিপার্টমেন্ট এই জব করি না কেনো একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার…

ক্যাম্পাস কমিউনিটিতে চাকরির সুযোগ শেয়ার করা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

আজকের প্রতিযোগিতামূলক চাকরি বাজারে সঠিক কর্মসংস্থান খুঁজে পাওয়া আগের চেয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। তবে, ছাত্র এবং নিয়োগকর্তাদের মধ্যে সেতু তৈরির একটি কার্যকর উপায় হলো ক্যাম্পাস…

অ্যালামনাই: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সম্পদ এবং সাফল্যের চাবিকাঠি

অ্যালামনাই যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য একটি অমূল্য সম্পদ। তারা প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্য, সাফল্য এবং সুনামের প্রতীক। একটি দৃঢ় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গড়ে তোলার মাধ্যমে, প্রতিষ্ঠানগুলি এই সম্পদকে কাজে…

Responses

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।